রংপুর নগরীতে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক সরকারি জমিতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা একটি ভবন উচ্ছেদ করার সময় লাঠিচার্জের ঘটনায় কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় ক্যামেরাপার্সন লেমন রহমানকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ৮টার সময় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত লেমন রহমান ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের রংপুর অফিসের ক্যামেরাপার্সন হিসেবে কর্মরত। ঘটনার খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাতেই রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন লেমন রহমানকে দেখতে যান রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা ও মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবদুল আলীম মাহমুদ। তারা চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন।
এদিকে এ ঘটনায় সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন এবং মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আবু সায়েম নামের একজন এএসআইকে এ ঘটনায় ক্লোজ করেছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার।
তবে ঘটনার ১২ ঘণ্টা পরেও নির্যাতনকারী পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার না করায় ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। এ নিয়ে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে রংপুর ভিডিও জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে সাংবাদিক নেতাদের বৈঠক চলছে।
রংপুর ভিডিও জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক সুমন জানান, সাংবাদিকদের ওপর পুলিশের এ হামলা কোনোভাবেই আমরা মানব না। কাজ করতে গিয়ে এভাবে যদি আমরা হামলার শিকার হই, তাও আবার পুলিশের দ্বারা- সেটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া সম্ভব নয়। এখন পর্যন্ত নির্যাতনকারী পুলিশরা বহাল আছে এটা আমরা মানব না। তাদের প্রত্যাহার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সেজন্য আমরা পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে রংপুরের সব সাংবাদিক সংগঠন এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বৈঠকে বসেছি।
এঘটনায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (টিসিএ) রংপুরের উদ্যোগে এক ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন, স্মারকলিপি প্রদানসহ প্রতিবাদ সভা করা হয়েছে। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে থাকা কিছু পুলিশ সদস্য আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে প্রকাশ্যে সাংবাদিককে লাঠিপেটা করায় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে সাংবাদিক সমাজ।
বর্বরোচিতহামলার প্রতিবাদে বুধবার দুপুরে রংপুর প্রেস ক্লাবে সভা করে টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন। এতে রংপুর প্রেস ক্লাব, রিপোর্টস ক্লাব, সিটি প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন রংপুর, রংপুর ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা অংশ নেন।
সভায় টিসিএর সভাপতি শাহ নেওয়াজ জনির সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- রংপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবদুর রশিদ বাবু, সহ-সভাপতি আবু তালেব, সাধারণ সম্পাদক রফিক সরকার, যুগ্ম সম্পাদক মানিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বাপ্পী, কার্যকরী সদস্য জাভেদ ইকবাল, প্রেস ক্লাবের সদস্য মাহবুবুল ইসলাম, টিসিএর সহ-সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ডেমি, সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক সুমন, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম রিপন, সদস্য মঈনুল হক, রংপুর ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আদর রহমান, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম জীবন, টিসিএর যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম মুকুল, কোষাধ্যক্ষ শরীফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম, দফতর সম্পাদক একেএম সুমন মিয়া, সদস্য আলী হায়দার রনি, ফুয়াদ হাসান, আসাদুজ্জামান আরমান, নুর মোহাম্মদ, নাজমুল হোসেন, আলমগীর হোসেনসহ অন্যরা।
প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, বেঁধে দেয়া ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দোষী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে সাংবাদিক সমাজ।
এরপর রংপুর প্রেস ক্লাবের সামনে প্রধান সড়কে ক্যামেরা রেখে এক ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন শেষে পুলিশ কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে টিসিএর নেতারা।