রাজধানী ঢাকায় আজ দুপুরের দিকে হঠাৎ ছয়টি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দেড়টার মধ্যে পৃথক পৃথক এলাকায় এসব বাসে আগুন দেওয়া হয়। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিস জানায়, ছয়টি বাসে এবং পুলিশ জানায় পাঁচটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। তবে কোথাও কেউ হতাহত হয়নি।
ফায়ার সার্ভিসের কর্তব্যরত কর্মকর্তা রাসেল শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম আগুনের ঘটনা ঘটে শাহজাহানপুরে একটি বাসে। এরপর কাঁটাবন, মতিঝিলের মধুমিতা সিনেমা হলের কাছে, গুলিস্তানে গোলাপ শাহ মাজার এলাকা, বংশালের নয়াবাজার ও প্রেসক্লাবের কাছে বাসে আগুন দেওয়া হয়। প্রতিটি ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভানোর কাজ করেছে। এর মধ্যে কাঁটাবনে বাসটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। বেলা দেড়টার আগে এসব ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্র জানায়, দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দেড়টার মধ্যে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে নয়াপল্টনে আনন্দ কমিউনিটি সেন্টারের কাছে পার্কিং করা একটি স্টাফ বাস, মতিঝিলে মধুমিতা সিনেমা হলের পেছনে একটি পাবলিক বাসে, গুলিস্তানে পীর ইয়ামিনি মার্কেটের সামনে বাসে, প্রেসক্লাব এলাকা ও কাঁটাবনে বাসে আগুন লাগে।
পুলিশের ধারণা, যাত্রীবেশে কেউ বাসগুলোতে আগুন লাগিয়ে নেমে গেছে। কে বা কারা লাগিয়েছে, কেন লাগিয়েছে, তার কারণ জানা যায়নি।
ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার ওয়ালিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে নাশকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে দুর্বৃত্তরা পরিকল্পিতভাবে বাসে আগুন দিয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ, প্রত্যক্ষদর্শী ও বিভিন্ন স্থানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, ঢাকা-১৮ আসনে চলমান উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটেছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে কাঁটাবনের ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী আজিজ সুপার মার্কেটের নিচতলার জমজম হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের কর্মচারী জাহিদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, দেড়টার দিকে বাসটি যানজটের কারণে গতি কমাচ্ছিল। তখনই পেছন দিক থেকে ধোঁয়া ওঠা শুরু হয়। বাসের যাত্রীরা দ্রুত নেমে পড়েন। মার্কেটের ওপর থেকে পানি ঢালা হয়। মার্কেট থেকে অগ্নিনির্বাপকযন্ত্র নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হয়।
আগুনে প্রায় পুরো বাসই পুড়ে গেছে। পরে পুলিশ এসে রেকার দিয়ে গাড়িটি নিয়ে যায়। তবে কীভাবে আগুন লেগেছে, তা তারা দেখেননি। গাড়িটি ছিল দেওয়ান পরিবহনের।
দেওয়ান পরিবহনের বাসটির চালক মো. রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ৪০ সিটের গাড়িতে ১২-১৩ জন যাত্রী ছিলেন৷ দুইটার দিকে কাঁটাবন সিগন্যালটা পার হওয়ার পরই হঠাৎ আমার গাড়ির পেছন দিকটায় আগুন দেখতে পাই৷ তবে পেছনের সিটগুলো পুরো খালি ছিল৷ আগুন দেখে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়ার পর আমিও দ্রুত নেমে যাই৷ তিন মিনিটের মধ্যে পুরো গাড়িটা পুড়ে যায়৷’
দেওয়ান পরিবহনের বাসটির মালিক আবদুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, তাঁর দুটি বাস আছে৷ এর মধ্যে পুড়ে যাওয়া গাড়িটির বয়স মাত্র দুই মাস৷ পুড়ে সব শেষ হয়ে গেল৷
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী প্রথম আলোকে জানান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রজনীগন্ধা পরিবহনের একটি বাসে আগুন ধরে গেলে যাত্রীরা তড়িঘড়ি করে নেমে যান। কে বা কারা কীভাবে আগুন দিয়েছে, তাৎক্ষণিক বোঝা যায়নি।
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মামুন আর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা কাঁটাবন ও প্রেসক্লাব এলাকায় এই দুটি বাসে আগুন দিয়েছে৷ কেউ হতাহত হননি৷ এই ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে৷