1. admin@lalpurbarta.com : Farhanur Rahman : Farhanur Rahman
  2. biswasfahim020@gmail.com : Fahim Biswas : Fahim Biswas
  3. farhanurlalpur@gmail.com : Abdul Muthalib Raihan : Abdul Muthalib Raihan
  4. farhanurrahman4@gmail.com : Sajibul Islam Ridoy : Sajibul Islam Ridoy
  5. tushar698934@gmail.com : Tusher Imran : Tusher Imran
স্মার্ট জাতি গঠনে প্রয়োজন স্মার্ট শিক্ষা - লালপুর বার্তা
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৩:০১ অপরাহ্ন

স্মার্ট জাতি গঠনে প্রয়োজন স্মার্ট শিক্ষা

ড. মুনাজ আহমেদ নূর
  • Update Time : শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০২০
  • ৬৫৪ Time View

এই স্মার্ট সিটির প্রথম ও প্রধান শর্ত হচ্ছে, সেখানকার বাসিন্দাদের আবশ্যিকভাবেই স্মার্ট হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আর সেজন্য প্রথমেই গুরুত্ব দিতে হবে আমাদের শিক্ষায়।

পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে নিয়ে আসতে হবে স্মার্ট প্রযুক্তির আওতায়। প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল শিক্ষা ছাড়াও স্মার্ট সিটি গঠন করা যাবে তবে সেটা টেকসই হবে না। কারণ ডিজিটাল শিক্ষার বাইরে থাকা মানুষ কোনো না কোনো সময় স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে বা সেটি ব্যবহারে দক্ষ হয়ে উঠবে না কখনও।

আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা খুব একটা খারাপ অবস্থায় না থাকলেও এটা দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লবের উপযোগী। তৃতীয় ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী হয়ে এটা এখনও গড়ে ওঠেনি। যদি চতুর্দশ শতকের জার্মান ক্লাসরুমগুলো দেখি তাহলে দেখব একজন শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন, শিক্ষার্থীরা তার সামনে বসে লেকচার শুনছেন এবং পরবর্তী সময়ে তা মুখস্থ করছেন। আমাদের আজকের ক্লাসরুমগুলোরও একই অবস্থা। এর থেকে আমরা এখনও বেরোতে পারিনি। প্রযুক্তিগত কিছু সংযোজন হলেও শিক্ষাদান পদ্ধতিতে খুব একটা পরিবর্তন এখনও আসেনি। আমাদের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ এই শিক্ষাব্যবস্থাকেই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য তৈরি করা। কিভাবে সেটি করা যাবে তাই নতুন করে ভাবতে হবে আমাদের। গভীর মনোযোগ দিতে হবে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থাকে স্মার্ট শিক্ষায় রূপান্তরে।

শিক্ষা একটি সামাজিক প্রক্রিয়া বা বলা ভালো মানুষের সামাজিকীকরণের উপায়। প্রতিটি দেশ বা সমাজের একটি নিজস্ব শিক্ষাব্যবস্থা থাকে। থাকে তার কিছু সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যও। সাধারণত তিনটি উদ্দেশ্যকেই মুখ্য হিসেবে বিবেচনায় নেয়া হয়। প্রথমত, তথ্যের বিচার-বিশ্লেষণ ও জ্ঞান আহরণ; দ্বিতীয়ত, দক্ষতা অর্জন এবং তৃতীয়ত, সামাজিক ও মানবিক হওয়া। তবে ১৯৮৯ সালে ইউনেস্কো একটি আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় চারটি উদ্দেশ্যের কথা বলেছে। এর মধ্যে প্রথমটি হল জানার জন্য শিক্ষা বা শিখন, দ্বিতীয়টি হল কাজের জন্য শিক্ষা বা শিখন, তৃতীয়টি হচ্ছে মিলেমিশে বসবাস করার জন্য শিক্ষা বা শিখন এবং চতুর্থটি হচ্ছে উৎকর্ষ সাধন, বিকাশ ও অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীলতা অর্জনের জন্য শিক্ষা বা শিখন।

বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় ইউনেস্কোর প্রথম দুটি উদ্দেশ্য থাকলেও মিলেমিশে বসবাস বা অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীলতা অর্জনের জন্য যে শিক্ষা বা শিখন তা অনেকটাই অনুপস্থিত। প্রকৃত নাগরিক গড়তে, মানবিক স্মার্ট মানুষ গড়তে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় সেই বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার দিকে জোর দিতে হবে। অথচ সেটিই এখনও পারছি না আমরা।

প্রথমেই বলেছি, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা তথ্যের বিচার-বিশ্লেষণ ও জ্ঞান আহরণের জন্য শিক্ষা এবং দক্ষতা অর্জনের জন্য শিক্ষণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এটা যে বর্তমান সামাজিক বাস্তবতা বিবর্জিত তা কিন্তু নয়। আমরা আমাদের বর্তমান বাস্তবতায় আমাদের যুব সমাজকে এ দুটো বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছি বা কোনো কাজে প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছি। আপাত অর্থে সেটা ঠিক থাকলেও পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে হলে মিলেমিশে বসবাসের শিক্ষা এবং অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীলতা অর্জনের শিক্ষার বিকল্প নেই। এজন্য আমরা বিশ্বের অন্য অনেক দেশের মতো কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করে শিক্ষা প্রদান করতে পারি। পাশাপাশি উচ্চশিক্ষায় আমাদের নতুন জ্ঞানও সৃষ্টি করতে হবে। তা না হলে অবধারিতভাবেই পিছিয়ে পড়তে হবে আমাদের।

বিশ্বব্যাপী শিক্ষাব্যবস্থায় ইনস্ট্রাকটিভিজম, কনস্ট্রাকটিভিজম ও কানেকটিভিজম- এ তিন ধরনের ক্লাসরুম শিক্ষাদান পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। আমাদের কনস্ট্রাকটিভিজমে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এটাকে আমরা বলছি প্রজেক্ট, প্রবলেম এবং এক্সপেরিয়েন্স বেইজ লার্নিং। আধুনিক শিক্ষার মাধ্যমে বর্তমান পৃথিবীতে যে জ্ঞান আছে সেই জ্ঞানকে প্রযুক্তির মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষে পুনরায় নতুন করে উৎপাদনের চেষ্টা করতে পারি। এ পদ্ধতির মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী সমাজে চলার নিয়ম, নতুন জ্ঞান সৃষ্টি এবং অন্যের কাছে তা স্থানান্তর করতে শিখবে। এ পদ্ধতিকেই আমরা বলছি জ্ঞানের পুনরুৎপাদন বা কনস্ট্রাকটিভিজম। এখানে শিক্ষার্থীরা কাজ করতে করতে শেখেন। শিক্ষক এখানে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করেন।

আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে জ্ঞানের স্থানান্তর। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার জন্য জ্ঞানের স্থানান্তর অত্যাবশ্যক; তবে জ্ঞানের পুনরুৎপাদন করতে পারলে শিখন অনেক সহজ হয়ে যায়। অনেক দেশই ইতোমধ্যে এ পদ্ধতিগুলোকে শ্রেণিকক্ষে নিয়ে আসতে সক্ষম হলেও আমরা এখনও এর থেকে দূরে আছি। ইনস্ট্রাকটিভিজম পদ্ধতিতে শিক্ষক ক্লাসে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে লেকচার প্রদান করেন এখানে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের কাছ থেকে সরাসরি শেখেন।

আর কানেকটিভিজম হচ্ছে সমাজের বিভিন্ন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ বা প্রদান। এই নেটওয়ার্কটি ফিজিক্যাল নেটওয়ার্ক হতে পারে আবার ভার্চুয়াল নেটওয়ার্কও হতে পারে। এ পদ্ধতিতে একজন শিক্ষার্থী বিভিন্ন ক্লাব, সামাজিক অঙ্গসংগঠনের মাধ্যমে শিখতে পারে আর ব্লগ, ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রামের মতো ইন্টারনেটভিত্তিক নেটওয়ার্ক থেকেও শিখতে পারে।

আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা ইনস্ট্রাকটিভিজম নির্ভর। অর্থাৎ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি। আমার সবাই এ পদ্ধতির মধ্য দিয়ে তৈরি হয়েছি। এখানে কোলাবোরেশন, পার্সোনালাইজ লার্নিং ও ডিফারেনশিয়েটেড লার্নিংয়ের সুযোগ নেই। এটা অনেক পুরনো পদ্ধতি। এ পদ্ধতি দিয়ে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য দক্ষ জনবল তৈরি করা সম্ভব হবে না। তাই আমাদের পরীক্ষিত কোনো বিকল্প পদ্ধতির দিকে যেতে হবে। আর সেই পদ্ধতি হতে পারে স্মার্ট শিক্ষা। এ জন্য প্রয়োজন হবে স্মার্ট ক্লাসরুম।

আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা চার ভাগে বিভক্ত- প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা। এগুলোকে এত ভাগে ভাগ না করে মৌলিক শিক্ষা, স্পেশালাইজ শিক্ষা এবং উচ্চশিক্ষায় ভাগ করা যেতে পারে। মৌলিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীকে সামাজিকতা, গাণিতিক যুক্তি, ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক জ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষা দেয়া যেতে পারে। এটা দশম শ্রেণি পর্যন্ত হতে পারে। এখানে বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায়ে শিক্ষা বলে কোনো ভাগ থাকবে না।। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থার কথা বলেছেন। এর পরে আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের স্পেশালাইজড বা বিশেষায়িত শিক্ষা দিতে পারি। তারপর উচ্চশিক্ষা দেয়া যেতে পারে।

এখন মৌলিক শিক্ষাকে যদি স্মার্ট করতে হয় তাহলে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, কলা ও গণিতের শিক্ষাটাই প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেয়া যেতে পারে। সেটা রোবট, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) কিংবা প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে হতে পারে। শিক্ষার্থীরা এ প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করে শিক্ষাকে উপভোগ্য করে তুলবে। রোবট বা এআই দিয়ে খেলনার মাধ্যমে সে শিখবে। যেমন ধরা যাক শিশুদের ব্লক প্রোগ্রামিংয়ের কথা। এর মাধ্যমে শিশুর মধ্যে যুক্তিবোধ, সৃজনশীলতা ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা বাড়ে।

শিক্ষক শিক্ষার্থীদের যা পড়াবেন সেই উপকরণগুলো প্রযুক্তির মাধ্যমে আরও উন্নত করে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোই হচ্ছে স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থা। আমাদের সমাজে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর শিক্ষার প্রেক্ষাপট, চাহিদা, আগ্রহ, সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত প্রেক্ষাপট ভিন্ন ভিন্ন। এই ভিন্নতা থাকার পরও আমরা যেভাবে ব্রিটিশ কলোনিয়াল পদ্ধতিতে অগ্রসর হচ্ছি তার অবসান ঘটানো প্রয়োজন। এই অবসান ঘটাতে হলে আমাদের ডিফারেনশিয়েটিভ ও পার্সোনালাইজ লার্নিংয়ের দিকে যেতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্লেক্সিবল কনটেন্ট তৈরি করতে হবে। স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থায় মাস্টারিং কনসেপ্ট, টিউটরিং এবং সামাজিক সম্পৃক্ততা থাকবে। তারপর শিক্ষার্থীকে কোনো ধরনের প্রতিযোগিতায় না ফেলে অ্যাসেসমেন্ট ও রিভিউয়ের মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করা যেতে পারে শিক্ষার্থীরা শিখছে কিনা।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৩০ জন শিক্ষার্থীকে যদি একজন শিক্ষকের মাধ্যমে একটি ক্লাসরুমে শিক্ষা প্রদান করা হয়, তাহলে তার শিক্ষার মান হয় এক রকম; তাকে যদি মাস্টারিং পদ্ধতিতে শিক্ষা প্রদান কারা হয় তাহলে সে একটু বেশি শেখে; তারপর ওয়ান টু ওয়ান বা টিউটরিং পদ্ধতিতে শিক্ষা প্রদান করা হলে সেখানে ফলাফল আরও ভালো হয়। আমাদের ক্লাসরুমগুলোকে স্মার্ট করতে হলে প্রযুক্তির মাধ্যমে করতে হবে। তাহলে আমরা ওয়ান টু ওয়ান, মাস্টারিং এবং টিউটরিয়াল লার্নিং টেকনোলজির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিতে পারব।

আমাদের শিক্ষার্থীদের টেকনোলজির মাধ্যমে ডিফারেনশিয়েটেড লার্নিং দেয়া হলে ফলাফল অনেক ভালো হবে। শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা বাড়বে এবং তারা শিখতে ভালোবাসবে। ব্লন্ডেড লার্নিংয়ের মাধ্যমে এটা প্রদান করা যেতে পারে। এখানে ফেইস টু ফেইসও থাকবে, আবার অনলাইনও থাকবে। এই ব্লন্ডেড লার্নিং দিতে হবে ফ্লিপড ক্লাসরুমের মাধ্যমে, যেখানে ভিডিও লেকচার বা শিক্ষক যা পড়াতে চান শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসার আগেই কোর্স শিক্ষক তাদের তা দিয়ে দেবেন। শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমে আসার আগে এগুলো দেখে আসবে। ক্লাসরুমে এসে সমস্যার সমাধান, কোলাবোরেশন ও এনগেজমেন্ট করবে। তারপর বাসায় গিয়ে রিপ্লেকশন করবে তারা আসলে কতটুকু শিখল।

আমাদের শিক্ষাপদ্ধতিতে আমরা এখনও এই ব্যবস্থাগুলো নিয়ে আসতে পারিনি। আমরা এখনও পঠন ও মুখস্থের মধ্যেই আটকে আছি। এর বাইরে যা আছে সেগুলো আমরা শিক্ষার মাধ্যমে আনতে পারছি না। এটা আমরা দিচ্ছি, তবে ক্লাসরুমের বাইরে। ক্লাসরুমে এটি করা গেলে আমাদের শিক্ষা অনেক বেশি ফলপ্রসূ ও উপভোগ্য হবে। এখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে ক্লাসরুম হবে অনেক বেশি সংযুক্ত এবং কোলাবোরেশনের মাধ্যমে তারা একসঙ্গে কাজ করতে পারবে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ক্রিটিক্যাল থিংকিং সক্ষমতা বাড়বে, যা একবিংশ শতাব্দীতে টিকে থাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই ক্রিটিক্যাল থিংকিং সক্ষমতা না থাকলে শিক্ষার্থী কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। সমস্যার সমাধান না করতে পারলে সে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। তাকে কোনো ডাটা দেয়া না হলে তা সে বিশ্লেষণ করতে পারবে না। আর এগুলো সম্ভব স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে।

বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থাকে স্মার্ট শিক্ষায় পরিণত করতে নিচের প্রস্তাবনাটি কাজে লাগানো যেতে পারে-

স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থা হবে সম্পূর্ণ ক্লাউড নির্ভর। এখানে কোনো ধরনের হার্ডওয়ারের প্রয়োজন হবে না। এই শিক্ষাব্যবস্থাকে তিনটি স্তরে ভাগ করা যেতে পারে- প্রথমত, স্কুল ইন ক্লাউড; দ্বিতীয়ত, কমিউনিটি স্কুল ইন ক্লাউড এবং তৃতীয়ত, রিজিওনাল স্কুল ইন ক্লাউড। এগুলোর প্রতিটি একেকটি লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এই লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমটিকে ট্রেনিং টুল হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এখানে ট্রেনিংয়ের বিষয়গুলো থাকবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এখান থেকে শিখতে পারবে।

স্কুল ইন ক্লাউডে প্রথমে একটি স্কুলকে লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আওতায় নিয়ে এসে এখানে ভালো ভালো শিক্ষকের লেকচার আপলোড করা যেতে পারে। এই লেকচারগুলো অন্য শিক্ষকরা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে সেগুলো তারা ব্যবহার করতে পারেন অথবা তারা নতুন করে তৈরি করতে পারেন। এই লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমটি কিভাবে ব্যবহার করা হবে তাও এর মধ্যে থাকবে। এর ফলে খুব সহজে অনেক বেশি শিক্ষককে এই স্কুল ইন ক্লাউডের মাধ্যমে সংযুক্ত করে প্রশিক্ষণ প্রদান করা যাবে। এর মধ্যে শিক্ষার্থীরাও জড়িত থাকবে। তারা লেকচারগুলো দেখবে, তাদের অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেবে, অন্য শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ ও আলোচনা করবে।

এরপর কমিউনিটির কিছু স্কুলকে একই লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আওতায় নিয়ে আসা যেতে পারে। এর ফলে আরও দশটি স্কুল এর মধ্যে যুক্ত হবে এবং এর আওতা আরও বড় হবে। সর্বশেষ রিজিওনাল স্কুল ইন ক্লাউডে সব বিভাগের স্কুলকে একই লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আওতায় নিয়ে আসা যেতে পারে। এর ফলে শিক্ষা ও ট্রেনিং খুব দ্রুত হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে পারবে।

আমরা সবসময় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে কথা বলে থাকি। আমাদের প্রাইমারিতে দেড় লাখ শিক্ষক আছে; আমরা কয়দিনে এই দেড় লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেব? আমরা যদি সরাসরি বা ফেইস টু ফেইস এই প্রশিক্ষণ দিতে যাই তাহলে অনেক সময় লাগবে। অনেক প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট লাগবে আর এত শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিতে গিয়ে দেখা যাবে ততদিনে আরেকটা প্রযুক্তি চলে এসেছে এবং আবার প্রশিক্ষণ দিতে হচ্ছে। প্রশিক্ষণ অবশ্যই দিতে হবে, তবে প্রশিক্ষণ পদ্ধতিকে পরিবর্তন করতে হবে। এই প্রশিক্ষণ কোনো ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে দিতে হবে। তাহলেই স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব হবে।

আমরা যদি লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে স্কুল ইন ক্লাউড, কমিউনিটি স্কুল ইন ক্লাউড এবং রিজিওনাল স্কুল ইন ক্লাউডে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিতে পারি, তাহলে দেশের সব শিক্ষাব্যবস্থা স্মার্ট শিক্ষাব্যবস্থার আওতায় চলে আসবে। আবার আমাদের শিক্ষার্থীরা যে কোনো দুর্যোগকালে এই ক্লাউড ব্যবহার করে ঘরে বসে ক্লাস করতে পারবে। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে সারা দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। ফলে কয়েক মাস ধরে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা বা ক্লাস থেকে দূরে রয়েছে। যদি দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে এই পদ্ধতির আওতায় নিয়ে আসা যায়, তাহলে এ সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে। আর যদি আমরা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে স্মার্ট করতে চাই অথবা আমাদের সমাজকে স্মার্ট করতে চাই, তাহলে শুধু তথ্যের বিচার-বিশ্লেষণ ও জ্ঞান আহরণ এবং দক্ষতা অর্জনের জন্য শিক্ষা গ্রহণ করলে হবে না। আমরা সমাজে কিভাবে মিলেমিশে বসবাস করব, কিভাবে উৎকর্ষ সাধন ও অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল মানুষ তৈরি করব সেদিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর : উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই বিভাগের আরও খবর
© সাপ্তাহিক লালপুরবার্তা কর্তৃক  © ২০২০ সর্বস্বত্ত্ব সংরক্ষিত
Theme Customized BY WooHostBD