আমি মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস্)।গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত কল্পে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার প্রথম পঞ্চবার্ষিকীর পরিকল্পনার (১৯৭৩-১৯৭৮) অংশ হিসাবে আমার জন্ম হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট আমার পিতার মৃত্যুর সাথে সাথেই মৃত্যু হয় আমাকে নিয়ে দেখা দীর্ঘ মেয়াদী স্বপ্নের। সেই কাল রাতেই মরণ ব্যাধি বাসা বাঁধে আমার শরীরে। আর এই ব্যাধি প্রায় চার যুগ ধরে বয়ে বেড়াতে বেড়াতে আজ আমি ক্লান্ত।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে ৪ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে ডিএমএফ’ ডিগ্রিধারী চিকিৎসকরা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সমূহে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদে নিয়োজিত থেকে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে আসছে। তবে এক দশক ধরে নিয়োগ বন্ধ রাখায় আজ আমি মৃত্যুর দ্বার প্রান্তে। গুনছি মৃত্যুর প্রহর।
মৃত্যু পথেও আমাকে অপরিকল্পিত ও মানহীন ভাবে তৈরি করতে ব্যস্ত আমার স্বজনরা। স্বজনের আবদারে বাবা আদর করে রাখা নাম মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল হলেও পরিক্ষায় লিখি মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং কোর্স, সার্টিফিকেটে আসে ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল ফ্যাকাল্টি, বিএমডিসিতে রেজিষ্ট্রেশন দেয় মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট নামে। আর কর্মক্ষেত্রে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, চাকরি না হলে হাতুড়ী ডাক্তার।
বিভিন্ন সেক্টরের ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীরা দ্বিতীয় শ্রেণীর পদমর্যাদা এবং দশম বেতন গ্রেড পেলেও ডিপ্লোমা চিকিৎসকগণ এখনো তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী। তবে বাকিরা পাইভেট প্যাক্টিস করে আমাকে বাঁচিয়ে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল অ্যাক্ট ২০১০(২০, ডিসেম্বর ২০১০-এ প্রকাশিত গেজেট) এর ধারা ২২(১) ও ২৯ (১) এর আওতায় গইইঝ/ইউঝ আইন আবারো গলা টিপে মারা চেষ্টা বন্ধ করা হলে আইনটির বিরুদ্ধে মামলা করে। তবে মামলা নিষ্পত্তি পযন্ত কিছুদিন বেঁচে থাকলেও মৃত্যু আমার ঘনিয়ে আসছে।
আমার মৃত্যুতে গুটি কয়েক মানুষের স্বার্থ হাসিল হলেও শ্রমজীবী কোটি মানুষ চিকিৎসা বঞ্চিত হবে ভাবতেও শরীরটা শিউরে উঠে। শিউরে উঠে যারা স্বল্প খরচে চিকিৎসা মেটাতে হিমশিম খাই তারা ব্যয় বহুল খরচে চিকিৎসা সেবা মেটাবে কিভাবে!
লেখক: সজিবুল ইসলাম হৃদয়
প্রাক্তন শিক্ষার্থী, উদয়ন ম্যাটস